• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

সাকিবের ওপর এত ক্ষোভ কেন দেশবাসীর একাংশের?


ক্রীড়া প্রতিবেদক অক্টোবর ১৮, ২০২৪, ১০:৪১ এএম
সাকিবের ওপর এত ক্ষোভ কেন দেশবাসীর একাংশের?

ঢাকা : বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তথা তর্কসাপেক্ষে সেরা ক্রীড়াবিদ সাকিব আল হাসান একটা সময় ছিলেন এদেশের মানুষের নয়ণের মণি। দেশ ও দেশের বাইরে তার কোটি কোটি সমর্থক ছিল। খেলোয়াড়ী জীবনের একপর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। মাগুরা থেকে সাংসদও হয়েছিলেন। কিন্তু সরকার পতনের পর সাকিব পড়ে যান চরম বেকায়দায়।

ক্যারিয়ারজুড়েই সাকিব আর বিতর্ক পাশাপাশি হেঁটেছে। তাকে নিয়ে নেতিবাচক খবরের অভাব নেই। মাঠের নানা কীর্তি তো আছেই, সেইসঙ্গে জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করে আইসিসি কর্তৃক দুই বছর (এক বছর স্থগিত) নিষিদ্ধও হয়েছিলেন! ‘জুয়া’ শব্দটির সঙ্গে তার সম্পর্কটা বেশ মাখোমাখো ছিল। বেটিং সাইটের সঙ্গেও তার নাম জড়িয়েছে। সেই সাইট সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনও করেছেন। সেইসঙ্গে জড়িয়েছে তার পরিবার এবং স্বজনদের নামও।

অনেক আগে থেকেই সাকিব বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এর মাঝে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা না দেওয়ার অভিযোগ আছে তার বন্ধ হওয়া কাঁকড়া খামারের বিরুদ্ধে। খেলা ফেলে শো রুম উদ্বোধন কিংবা বিজ্ঞাপনী কাজ করায় সাকিবের ওপর ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল আগে থেকেই। অনেকে এটাকে ‘পরশ্রীকাতরতা’ হিসেবেও মনে করেন। অবশ্য এই সাকিব পুলিশ খুনের আসামির শো রুম উদ্বোধন করতে দুবাইও গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের এই সেরা তারকার নাম জড়িয়েছে শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারিতে। একটা অভিযোগে ইতোমধ্যে তাকে জরিমানাও করা হয়েছে। সবকিছুর পরও সাকিব ছিলেন দেশের ক্রিকেটের অবিসংবাদিত নায়ক। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরই দাবার গুটি উল্টে যায়। আন্দোলনের আগে থেকে সাকিব দেশের বাইরে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেললেও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় হত্যা মামলা! সেই মামলা এখনও প্রত্যাহার হয়নি।

পরিস্থিতি বুঝে ভারতের মাটিতেই টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন সাকিব। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্ট খেলতে চেয়েছিলেন। সেইসঙ্গে চেয়েছিলেন নির্বিঘ্নে দেশে প্রবেশ এবং দেশত্যাগের নিশ্চয়তা। কিন্তু বিসিবি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেয়, এসব বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। তাকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। নির্দিষ্ট একজনকে ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা দেওয়ার সামর্থ্য নেই বিসিবির।’

দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গত ২৯ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন, ‘এখন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের একজন খেলোয়াড়কে যতটুকু নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, দেওয়ার দায়িত্ব, সেটা দেব, দেশে এলে আমরা দেব। কিন্তু উনার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে…। জনগণের কোনো ক্ষোভ থাকলে সেটা তো আমাকেই রিডিউস করতে হবে, কথা দিয়ে। আমার যেটা মনে হয়, উনাকে উনার বিষয়টা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’

ক্রীড়া উপদেষ্টার বক্তব্যের পর ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় নিরব থাকায় দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান সাকিব। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার করে তিনি লিখেন, ‘আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোন দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন।’

এরপরও সাকিবের প্রতি মন গলেনি দেশবাসীর একাংশের। এর কারণ, দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সাকিবের নিরব থাকা। দেশে যখন পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারা হচ্ছে, তখন পরিবার নিয়ে সাকিবের ঘুরে বেড়ানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেম দেখে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এছাড়া বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে গিয়ে এক দর্শককে ‘আপনি দেশের জন্য কী করেছেন?’ –এমন প্রশ্ন করাও সাকিবকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়।

পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিক হলেও গত কয়েকদিন ধরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাকিবের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ মানববন্ধন, মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। তাকে দেশের মাটিতে টেস্ট খেলার সুযোগ না দেওয়ার দাবিতে একটি পক্ষের আজ বিসিবিতে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা।

এরপরও সাকিবকে রেখেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করে বিসিবি। গতকাল সাকিব দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দুবাই ট্রানজিটে অপেক্ষমান থাকেন। দেশ থেকে তাকে জানানো হয়, নিরাপত্তার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের বিমানে না উঠতে। আজ দুপুরে সাকিবই কিছু সংবাদমাধ্যমকে জানান, নিরাপত্তার কারণে তিনি দেশে ফিরছেন না।

দেশের মাটিতে সাকিব শেষ টেস্ট খেলতে না পারায় হতাশ ক্রিকেটপ্রেমীদের বড় একটি অংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য- সাকিব তো আর খুন করেননি। তিনি অন্য কোনো অন্যায় করে থাকলে আদালতে তার বিচার হবে। কিন্তু দেশের মাটিতে বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অল-রাউন্ডারকে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার সুযোগ না দেওয়াটা মানতেই পারছেন না দেশবাসীর একাংশ। সাকিব শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরতে পারবেন কিনা- তা অনিশ্চিত। তিনি ফিরুন আর নাই ফিরুন- বাংলাদেশের ক্রিকেটের ট্র্যাজিক হিরো হয়েই থেকে যাবেন।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!