• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিতর্ক-আন্দোলন ছাপিয়ে মাঠের ক্রিকেটের অপেক্ষা


ক্রীড়া প্রতিবেদক অক্টোবর ২১, ২০২৪, ১০:০৩ এএম
বিতর্ক-আন্দোলন ছাপিয়ে মাঠের ক্রিকেটের অপেক্ষা

ঢাকা : একবার মনে হয় এই পক্ষ বিজয়ী, পরক্ষণেই দেখা যায় আরেক পক্ষের দাপুটে উপস্থিতি। দুপুর থেকে বিকেল হয়ে সন্ধ্যা গড়িয়েও চলতে থাকল লড়াই। টানটান উত্তেজনা যাকে বলে। স্মরণীয় অনেক লড়াইয়ের স্বাক্ষী এই মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। তবে এবারের এই লড়াই ক্রিকেটীয় নয়, বরং সাকিব আল হাসানের পক্ষে-বিপক্ষে শক্তি প্রদর্শনীর মহড়া। মিছিল, স্লোগান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় স্টেডিয়ামের চারপাশের এলাকা হয়ে উঠল যেন পল্টন ময়দান কিংবা শাহবাগ।

টেস্ট শুরুর আগের দিন সন্ধ্যা ৬টাতেও যখন মাঠের চারপাশে এই অবস্থা, বাস্তবতাও তখন অনুমেয়। দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশের ক্রিকেট লড়াই শুরু হচ্ছে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট জয়ের সুবর্ণ সুযোগ এবার। কিন্তু সিরিজের আবহ সঙ্গীতে ক্রিকেট ব্যাপারটিই প্রায় উধাও।

সিরিজ শুরুর স্রেফ পাঁচ দিন আগে কোচ পরিবর্তন করাকে ঘিরে কিছু অস্থিরতা বাংলাদেশ দলে এমনিতেই থাকার কথা। প্রস্তুতিও খুব আদর্শ হওয়ার কারণ নেই। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে সাকিবের দেশে ফিরতে না পারা ঘিরে গত কয়েক দিনের নানা কর্মসূচী-আন্দোলন। ম্যাচের আগের দিন সেটি মারামারিতে পর্যন্ত গড়াল। মাঠের বাইরের এসব ঘটনাপ্রবাহে ক্রিকেটই যেন হাঁসফাঁস করছে।

এসবের মধ্যেই শুরু হচ্ছে মাঠের ক্রিকেট। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি মিরপুরে শুরু সোমবার সকাল ১০টায়।

২২ গজে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান-বোলারদের সামলানোর আগে বাংলাদেশের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ, বাইরের ঘটনার ঘনঘটা থেকে মুখ ফিরিয়ে মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ ধরে রাখা। ম্যাচ শুরুর আগে দুই অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনেও বারবার ঘুরেফিরে এলো সাকিবের না থাকার প্রসঙ্গ।

পরিস্থিতি কঠিন, মেনে নিচ্ছেন শান্ত। তবে ক্রিকেটে মনোযোগ রাখার প্রত্যয়ও শোনালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

সত্যি বললে… কঠিন (চারপাশের পরিস্থিতি)। তবে আমার মনে হয়, এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। এসব নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করা মানে তাই সময় নষ্ট। যত বেশি সম্ভব খেলাটায় মনোযোগ রাখতে চাই। খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি টেস্ট ম্যাচ। আমার মনে হয়, ক্রিকেটাররা সেদিক থেকে খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং চেষ্টা করছে সেটায় মনোযোগ রাখার।

আমার মনে হয়, বাইরের জিনিস এখন কারও মাথাতেই নেই। যেহেতু আগামী কালই খেলা, সবাই খেলায় মনোযোগ দিচ্ছে।

মাঠের ক্রিকেটে তাকিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াইয়ের ইতিহাস থেকে প্রেরণার উৎস খুব একটা নেই। দুই দলের ১৪ লড়াইয়ের ১২টিই হেরেছে বাংলাদেশ। যে দুটি ম্যাচ ড্র হয়েছে, দুটিই বৃষ্টির সৌজন্যে।

তবে সেই ইতিহাসকে পাত্তা খুব একটা দিচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক। এই সিরিজে বরং নিজেদের সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন তিনি।

সবশেষ চার টেস্টের দুটিতে আমরা জিতেছি, দুটিতে হেরেছি। জয়ের হার ৫০ শতাংশ। ভারতে আমরা ভালো খেলিনি। তবে সব মিলিয়ে আমার মনে হয়, দলটা ভালো অবস্থানে আছে। ঘরের মাঠে আমরা সবসময়ই ভালো করি। বিশেষ করে আমাদের যে বোলিং আক্রমণ ও ব্যাটসম্যানরা আছে, যদি ঠিকঠাক করতে পারি, তাহলে আমার মনে হয়, ভালো টেস্ট ম্যাচই হবে।

যে দল সেশন বাই সেশন ভালো করবে, সেই দলটাই জিতবে। তবে অবশ্যই আমি বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখব।

আপাত চোখে বাড়াবাড়ি মনে হলেও শান্তর কথার গভীরে গেলে ভুল বেশি মনে হবে না। গত ১০ বছরে উপমহাদেশে কোনো টেস্ট জিততে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। এই অঞ্চলে সবশেষ ৯ টেস্টেই তারা হেরেছে। বাংলাদেশে তাদের সবশেষ সফর ছিল ২০১৫ সালে। সেবারের চেয়ে এখনকার বাংলাদেশ দল টেস্টে যথেষ্টই পোক্ত ও অভিজ্ঞ।

উল্টো চিত্র দক্ষিণ আফ্রিকার। দক্ষিণ আফ্রিকার এই টেস্ট দলটি অনেক বছরের মধ্যে তাদের সবচেয়ে দুর্বল ও অনভিজ্ঞ দল। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ছাড়া বাংলাদেশে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নেই একজনেরও। সে বাভুমাও চোটের কারণে খেলতে পারবেন না প্রথম টেস্টে।

ব্যাটিংয়ে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মার্করাম ও বোলিংয়ে কাগিসো রাবাদা আর কেশাভ মহারাজ ছাড়া তেমন অভিজ্ঞ কেউ নেই। ডেভিড বেডিংহ্যাম যদিও টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো করেছেন, টোনি ডি জর্জি, কাইল ভেরেইনা, রায়ান রিকেলটেন বেশ সম্ভাবনাময়, ট্রিস্টান স্টাবস ও ডেওয়াল্ড ব্রেভিস দারুণ প্রতিভাবান। তবে এই কন্ডিশনে, বিশেষ করে মিরপুরের মন্থর ও নিচু বাউন্সের উইকেটে বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ তাদের অপেক্ষায়।

বোলিংয়ে রাবাদা কার্যকর হতে পারেন যে কোনো উইকেটেই। নান্দ্রে বার্গারের চোটে সুযোগ পাওয়া লুঙ্গি এনগিডি নিজের দিনে হুমকি হয়ে উঠতে পারেন প্রতিপক্ষের জন্য। মহরাজ তো সহায়ক উইকেটে নিশ্চিতভাবেই বিপজ্জনক হবেন। এমনকি অফ স্পিনার ডেন পিটও খারাপ নন। তবে সবকিছুর পরও এই কন্ডিশনে ও উইকেটে বাংলাদেশ অনেক বেশি অভিজ্ঞ এবং সিরিজ শুরুর আগে শান্তরা নিশ্চিতভাবেই ফেভারিট।

সেই আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন পড়ল শান্তর কণ্ঠে।

আমি বিশ্বাস করি অবশ্যই জেতা উচিত। দল খুব ভালো আমাদের। যদি আমরা ভালোভাবে আমাদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে পারি, আমাদের প্রক্রিয়ায় থাকতে পারি, এবার আমার মনে হয় ফলাফল ভিন্ন হবে (আগের চেয়ে)।

সাকিব না থাকায় দলের ভারসাম্য নিয়ে টানাপোড়েনের কথা বারবারই বললেন শান্ত। তার বদলে একজন বাড়তি স্পিনার খেলাবে দল। সেই স্পিনার নাঈম হাসান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কোনো কারণে চার স্পিনার একাদশে রাখলে অভিষেক হবে হাসান মুরাদের। আরেকটা পরিবর্তন আসতে পারে টপ অর্ডারে। টানা ব্যর্থ হওয়া জাকির হাসানের জায়গায় সুযোগ পেতে পারেন মাহমুদুল হাসান জয়।

পেসার একজন নাকি দুজন, সেটিও ঠিক করতে হবে দলকে। সেই পেসার বা পেসারদ্বয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও হতে হবে কৌশলি।

এই কন্ডিশনে নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতির কথা অকপটে বললেন এইডেন মার্করামও। তবে শেখার পথ ধরে জয়ের ঠিকানা পাওয়ার প্রত্যয় শোনালেন তিনি।

অবশ্যই স্পিন সামলানো নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে, বিশেষ করে আমরা যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছি। এই ধরনের কন্ডিশন আমরা দেশের মাটিতে পাই না। তরুণ একটি দল আমরা, খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ হয় না, আমাদের জন্য এই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়াটা বেশ রোমাঞ্চকর। দল হিসেবে আমাদের জন্য এটা দারুণ সুযোগ এবং আমরা খুবই আগ্রহ নিয়ে মুখিয়ে আছি।

আমরা অবশ্যই এটির (জয়ের) জন্যই এখানে এসেছি। ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই। টেস্ট ইউনিট হিসেবে আমাদের স্কিল বেশ ভালো এবং স্পিন খেলার বিকল্পও আমাদের এখন বেশি। আমাদের জন্য এটা নতুন কন্ডিশন এবং অনেক সেশন খুব ভালো ক্রিকেট খেলার সুযোগ। সেটা যদি আমরা পারি, তাহলে ইতিবাচক ফলও আসবে। তবে এটা নিয়ে কোনো সংশয় নেই যে, কাজটা কঠিন হবে এবং সবচেয়ে রোমাঞ্চকর দিক এটিই।

সেই রোমাঞ্চটুকু খুঁজবে বাংলাদেশ দলও। মাঠের ক্রিকেটে যদি দারুণ কিছু করতে পারেন শান্তরা, তাহলেই কেবল স্তিমিত হয়ে আসতে পারে মাঠের বাইরের ডামাডোল।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!