ঢাকা: দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে পারছেন না সাকিব আল হাসান। আর ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে না পারলে ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টই হয়ে থাকবে তার শেষ টেস্ট।
বিসিবি যদি তাকে আর প্রয়োজন মনে না করে, তাহলে সাকিব তার শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটিও খেলে ফেলেছেন গত বিশ্বকাপে। কানপুরে নিজেই জানিয়েছেন তা। অর্থাৎ তার দিক থেকে এই সংস্করণেও ‘অবসর’ নেওয়া হয়ে গেছে। সাকিবের এখন তাই শুধু ওয়ানডে ক্রিকেটেই খেলার কথা। টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর ঘোষণার দিনই তিনি বলেছেন, ওয়ানডেকে বিদায় বলতে চান পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় আগামী ফেব্রুয়ারির চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে।
কিন্তু সেই সুযোগও কি পাবেন সাকিব? দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তার শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছা পূরণ হয়নি বলেই প্রশ্নটা আসছে- চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলে ওয়ানডেকে বিদায় জানানোর ইচ্ছা পূরণের বাস্তব সম্ভাবনা কতটা?
একজন ক্রিকেটার দেশে থাকবেন না, দেশের মাঠের ক্রিকেটে তিনি অচ্ছুত বিবেচিত হবেন, সেই ক্রিকেটারই আবার বিদেশে থেকে বিদেশের মাটিতে দেশের হয়ে খেলবেন-এমন ‘প্রবাসী খেলোয়াড়ে’র ধারণাটাই যে অচল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে!
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলতি দুই টেস্টের সিরিজের দ্বিতীয়টি শুরু হবে ২৯ মে, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এই টেস্ট শেষেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবে বাংলাদেশ দল। শারজায় ৬, ৯ ও ১১ নভেম্বর ম্যাচ তিনটি খেলে সেখান থেকেই পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে দল উড়াল দেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে।
মিরপুরে শেষ টেস্ট খেলতে দেশে আসতে না পেরে দুবাই থেকে সাকিব ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। আপাতত সেখানে সময় কাটছে পরিবারের সঙ্গে। এদিকে আফগানিস্তান সিরিজের আর বেশি দিন নেই। দল থেকে এতটা দূরে থেকে সাকিব কীভাবে প্রস্তুত হবেন এই সিরিজের জন্য? নির্বাচকেরাই বা কীভাবে জানবেন সাকিব সিরিজটা খেলার জন্য সব দিক থেকে প্রস্তুত কি না।
অবশ্য সাকিবকে নিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণেই বিসিবির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা ছাড়া নির্বাচক কমিটির পক্ষে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। যত দূর জানা গেছে, বিসিবি এ ব্যাপারে নির্বাচকদের এখনো কিছু জানায়নি। বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ বর্তমানে দেশের বাইরে। আগামীকাল তার দেশে ফেরার পরই হয়তো এ ব্যাপারে আলোচনা শুরু হবে।
তখন প্রশ্ন জাগবে, তাহলে বিসিবিই কি বাধ্যতামূলক অবসরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারকে? টি-টোয়েন্টি আর খেলবেন না, টেস্ট ক্যারিয়ারও একরকম শেষ। এখন ওয়ানডে দলেও জায়গা না হলে ধরে নিতে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই সাকিবের বিদায় ঘটে গেল অনানুষ্ঠানিকভাবে। এরপর থেকে সাকিবের খেলা দেখতে হবে শুধু বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেই।
এ রকম বিদায়কে ‘অনানুষ্ঠানিকভাবে’ বলতে হচ্ছে কারণ, সাকিব নিজে বলেননি তিনি আর ওয়ানডে খেলবেন না। গা থেকে রঙিন জার্সিটা খুলে রাখতে তিনি তাকিয়ে আছেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দিকে। সে ইচ্ছা যদি পূরণ না হয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তার মতো তারকা ক্রিকেটারের বিদায়টা হয়ে থাকবে বিতর্কিত, ভবিষ্যতের জন্য যা ভালো উদাহরণ হয়ে থাকবে না।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ঘোষণা দিয়ে অবসর নেওয়ার রেওয়াজ তেমন নেই। কখনো ক্রিকেটাররা নিজ থেকেই ঘোষণাটা দেন না। কখনো বিসিবিই সে রকম পরিস্থিতি রাখে না। সাকিব ঘোষণা দিয়েছিলেন। পেছনের কারণ যেটাই থাকুক, তাকে সেই মঞ্চটা দিতে না পারার দায় নিতে হবে বর্তমান বোর্ডকেই।
আসলে সাকিব ‘সাকিব’ বলেই বিষয়টাকে এত সরলভাবে ভাবার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইতিহাসের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তার যদি একটা সুন্দর বিদায় না হয়, সে ইতিহাসটাই যে রয়ে যাবে অসম্পূর্ণ!
এআর