ঢাকা : অবশেষে বহু কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ।
রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বাফুফে কংগ্রেসের পাশাপাশি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। সরকারের পটপরিবর্তনের পর নতুন মেরুকরণ হয়েছে বাফুফে নির্বাচনের। এর আগে পঞ্চমবারের মতো বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন কাজী মো. সালাউদ্দিন।
কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর অনেক নাটকীয়তা শেষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাফুফের টানা চারবারের এ সভাপতি। ফলে বাফুফের নির্বাচন নতুন মোড় নেয়।
সালাউদ্দিন নির্বাচন না করার ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন তরফদার রুহুল আমিন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন সাবেক বাফুফে সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল। এ দুজনকে ঘিরে উত্তাপ ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত তরফদার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
অবশ্য সভাপতি পদে তাবিথের প্রতিপক্ষ হিসেবে আছেন দিনাজপুরের তৃণমূলের কোচ এএফএম মিজানুর রহমান চৌধুরী। তবে আলোচনায় তাবিথ আউয়ালই অনেক এগিয়ে আছেন। বাফুফে নির্বাচনে ২১ জন প্রার্থী বেছে নিতে ভোট দেবেন মোট ১৩৩ কাউন্সিলর। সব পদ মিলিয়ে এবার মোট প্রার্থী হলে ৪৫ জন।
এর মধ্যে একটি সভাপতি পদের বিপরীতে ২ জন, চারটি সহ-সভাপতি পদে ৬ জন ও ১৫টি নির্বাহী সদস্য পদে ৩৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে, ২০০৮ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বাফুফে নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন মেজবাহ উদ্দিন। এবার তার নেতৃত্বেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ ছাড়া বাফুফে নির্বাচন ঘিরে আরও কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক-
ক্রীড়া উপদেষ্টার প্রশ্ন : ‘বাফুফের নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, এ নিয়ে আমি সন্দিহান। আগের অনেক কাউন্সিলরই এখানে রয়েছেন। যাদের অনেকে পলাতক ও আসামি এ রকম শুনেছি। ফিফার বাধ্যবাধকতা, বাফুফের নিয়মের দিকে সম্মান রাখতে হচ্ছে।’
গত সোমবার হঠাৎ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে সফরে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ক্রীড়া উপদেষ্টা সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘বাফুফে নির্বাচন চলছে। এ নিয়ে অনেক কিছুই শুনছি, অভিযোগও আছে। এ জন্য বাফুফেতে আসা। এ নিয়ে কথা বললাম।’
তাবিথের প্রতিপক্ষ মিজানুর : এবার বাফুফে নির্বাচনে সভাপতি পদে চারজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। তারা হলেন- সাবেক সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল, দিনাজপুরের মিজানুর রহমান, ময়মনসিংহের আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহাদাত হোসেন জুবায়ের। এর মধ্যে রেদোয়ান ও জুবায়ের শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে তাবিথ আউয়ালের বিপক্ষে লড়ছেন মিজানুর রহমান। তবে আলোচনায় নেই তিনি।
এবারও সরে দাঁড়ালেন তরফদার : বাফুফের গত নির্বাচনেও সভাপতি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন তরফদার রুহুল আমিন। কিন্তু নানা চাপের কারণে শেষ পর্যন্ত সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তখন নির্বাচনী লড়াইয়ে নামেননি এ ব্যবসায়ী। এবারও সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন তরফদার। অবশ্য সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ইমরুল হাসানের বিপক্ষে লড়তে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকেও সরে যান এই আলোচিত ক্রীড়া সংগঠক।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ইমরুল হাসান : আগে বাফুফে কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। দেশের পটপরিবর্তনের পর এই পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
এবারের নির্বাচনে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। আগে সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে তরফদার রুহুল আমিন প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত সরে যান। ফলে বরাবরের মতোই বিনা সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ভোটযুদ্ধ হচ্ছে না। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ইমরুল হাসান।
সহ-সভাপতি পদে ৬ জনের লড়াই : বাফুফে নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হলেন ৬ জন। তারা হলেন- ফাহাদ মোহাম্মদ আহমেদ করিম, মো. ওয়াহিদ উদ্দীন চৌধুরী (হ্যাপি), মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, মো. শফিকুল ইসলাম মানিক, সাব্বির আহম্মেদ আরেফ ও সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী সাব্বির। এখান থেকে চারজন নির্বাচিত হবেন।
সদস্যপদ ঘিরে আকর্ষণ : বাফুফে ২১ জনের কার্যনির্বাহী কমিটির ১৫ জনই হলেন সদস্য। এ ১৫ সদস্যপদের বিপরীতে লড়ছেন মোট ৩৭ জন প্রার্থী। কারা জিতবেন, তা বলা কঠিন। তবে পরিচিত মুখ সাবেক ফুটবলার সত্যজিৎ দাস রুপু, ছাইদ হাছান কানন, ইকবাল হোসেন, সাইফুর রহমান মণি, গাউসরা সদস্যপদে লড়ছেন। তাদের জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে।
অন্যদিকে, নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ, সাবেক নারী ফুটবলার মাহমুদা খাতুন অদিতিরও জয়ের সম্ভাবনা আছে।
সদস্য পদপ্রার্থী নিষিদ্ধ সোহাগের স্ত্রী : বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দুই মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফিফা। বাফুফের দুর্নীতির কারণে নিষিদ্ধ হওয়া সোহাগের স্ত্রী তাসমিয়া রেজওয়ানা আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে কাউন্সিলর হন। দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব বিক্রমপুর কিংস থেকে কাউন্সিলর হয়েছেন সোহাগের স্ত্রী। তিনি বাফুফে নির্বাচনে সদস্যপদে প্রার্থীও হয়েছেন। এ নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। সোহাগ ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হলেও তার স্ত্রী বা পরিবারের কেউ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকাÐে অংশগ্রহণে অবশ্য আইনত বাধা নেই।
ভোট দেবেন ১৩৩ কাউন্সিলর : বাফুফে নির্বাচনের জন্য ১৩৭ জন কাউন্সিলরের নাম বাফুফেতে জমা পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে ১৩৩ জন কাউন্সিলরকে চ‚ড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারা ২১টি পদের প্রার্থীদের বাছাই করতে ভোট দিতে পারবেন।
বাফুফে লোগো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা : নির্বাচনে বাফুফের লোগো ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায়। কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য বাফুফের লোগো ব্যবহার করতে পারবেন না। এ বিষয়ে প্রার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। বাফুফে নির্বাচনী বিধিমালায় লোগো ব্যবহার নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে বাফুফের আপত্তি করার অধিকার রয়েছে।
কাউন্সিলর জটিলতা মিটেছে : বাফুফে নির্বাচনে কাউন্সিলর সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে এ নিয়ে ফুটবলের বিভিন্ন পক্ষ বৈঠকে বসে সমঝোতার ভিত্তিতে মীমাংসা হওয়া সেটি আর আদালতে গড়ায়নি। জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ের ফুটবল সংগঠক জসিমউদ্দীন খসরু কাউন্সিলরশিপ না পেয়ে আদালতে মামলার আবেদন করেন। যদি শুনানিতে আবেদনকারী খসরুর পক্ষে সিদ্ধান্ত যেত তাহলে নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা দেখা দিত। কাউন্সিলর বিষয়টি মিটে যাওয়ায় আইনি জটিলতা না থাকায় বাফুফে নির্বাচন আয়োজনে আর কোনো বাধা নেই।
ফিফা-এএফসির পর্যবেক্ষক : বাফুফে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকার কথা রয়েছে ফিফা ও এএফসির প্রতিনিধি। এএফসির মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন সাউথ এশিয়ান ইউনিটের প্রধান ক্যাটেল, ফিফার কর্মকর্তা প্রিন্স রুসেফ, মাহমুদ মনসুর নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে থাকবেন বলে জানা যায়। পর্যবেক্ষক হিসেবে সাফের প্রতিনিধিও থাকতে পারেন।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :