ঢাকা: নানা নাটকীয়তার পর ফুটবল বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পুরস্কার ব্যালন ডি’অর জয়ীর নাম ঘোষণা হল। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ব্যালন না পাওয়ার গুঞ্জন এবং পুরো রিয়াল মাদ্রিদ দলের প্যারিসের এই অনুষ্ঠান বয়কট নিয়ে নাটকীয়তা চলছিল সন্ধ্যা থেকে।
স্পেন ও ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার রদ্রিগো হার্নান্দেজের হাতেই ব্যালন ডি’অর ওঠার মাধ্যমে যার ইতি ঘটেছে। তাকে বহুল কাঙ্ক্ষিত এই গোল্ডেন বল তুলে দিয়েছেন ১৯৯৫ ব্যালনজয়ী ফরোয়ার্ড জর্জ উইয়াহ।
প্যারিসে সোমবার রাতে জমকালো অনুষ্ঠানে ২৮ বছর বয়সী রদ্রির হাতে তুলে দেওয়া হয় ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’- এর পুরস্কার, ব্যালন ডি’ অর ২০২৪।
এসিএল চোটে বর্তমানে মাঠের বাইরে থাকা এই ফুটবলার ক্রাচে ভর দিয়ে মঞ্চে ওঠেন পুরস্কার নিতে। পুরস্কার তুলে দেন ১৯৯৫ সালের বিজয়ী জর্জ ওয়েহ। ৬৪ বছর পর মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি জিতলেন স্পেনের কোনো পুরুষ ফুটবলার।
সবশেষ ১৯৬০ সালে জিতেছিলেন লুইস সুয়ারেজ। এতদিন স্পেনে জন্ম নেওয়া একমাত্র ব্যালন ডি’অর জয়ী ছিলেন বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলানের সাবেক এই মিডফিল্ডার। এবার তার পাশে বসলেন আরেক মিডফিল্ডার।
অবশ্য সুয়ারেজের আগে স্পেনের খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্যালন ডি’অর জেতেন আলফ্রেদো দি স্তেফানো (১৯৫৭ ও ১৯৫৯)। তবে তার জন্ম ছিল আর্জেন্টিনায়, ১৯৫৬ সালে স্পেনের নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন কিংবদন্তি এই ফরোয়ার্ড।
২০০৩ সালের পর এবারই প্রথম ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন না গতবারের বিজয়ী লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর কেউই। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের পাঠ চুকিয়ে ফেলা দুই মহাতারকা মিলে পুরস্কারটি জিতেছেন ১৩ বার। ২০০৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই দুজনের বাইরে পুরস্কারটি জেতা দুই ফুটবলার লুকা মদ্রিচ ও কারিম বেনজেমাও গত সেপ্টেম্বরে ঘোষিত ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন না।
এবার ব্যালন ডি’অর জয়ের জন্য অনেকেই এগিয়ে রাখছিলেন ভিনিসিউসকে। পুরস্কারটি তার ‘প্রাপ্য’ বলেও মনে করছিলেন কেউ কেউ। গত মৌসুমে রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দলের ২-০ ব্যবধানের জয়ে একটিসহ আসরে তিনি করেন ৬ গোল। নির্বাচিত হন আসরের সেরা খেলোয়াড়।
২০২৩-২৪ মৌসুমে লা লিগায় তিনি করেন ১৫ গোল। এছাড়া স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে করেন হ্যাটট্রিক। জুন-জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকায় জাতীয় দল ব্রাজিলের হয়ে গ্রুপ পর্বে ভিনিসিউস জোড়া গোল করেন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। কার্ডের খাড়ায় কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলতে পারেননি তিনি। ওই ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল।
সোমবার ভোটাভুটির ভিত্তিতে ব্যালন ডি’অরের ১২ জনের একটি তালিকা ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে সবার ওপরে দেখা যায় ভিনিসিউসের নাম। এর খানিক পরই ছড়িয়ে পড়ে বিস্ফোরক এক খবর। সূত্রের বরাত দিয়ে ইএসপিএন জানায়, ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানের জন্য প্যারিসে যাচ্ছেন না রিয়াল মাদ্রিদের কেউ, কারণ ক্লাবটি বুঝতে পেরেছে, ভিনিসিউস নয়, বর্ষসেরার পুরস্কারটি পাচ্ছেন রদ্রি।
রদ্রির পারফরম্যান্সও বেশ উজ্জ্বল ছিল গত মৌসুমে। সিটির টানা চতুর্থ প্রিমিয়ার লিগ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। গত জুলাইয়ে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে স্পেনের শিরোপা জয়েও এই স্প্যানিয়ার্ড রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, চোটের কারণে ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে না খেলেও জেতেন টুর্নামেন্টের সেরার খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে আসরে দলের সাত ম্যাচের সবগুলোতেই শুরুর একাদশে থেকে মাঝমাঠে সুর বেঁধে দেন তিনি, একটি গোল করেন শেষ ষোলোয় জর্জিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে। সিটির হয়ে ২০২৩-২৪ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫০ ম্যাচে তিনি গোল করেন ৯টি। এছাড়া অবদান রাখেন সতীর্থদের ১৪ গোলে।
এদিকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েদের ব্যালন ডি’র জিতেছেন বার্সেলোনার স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আইতানো বনমাতি। গত মৌসুমে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লিগা এফ, কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। স্পেনের নেশন্স লিগ জয়েও তার ছিল উল্লেখযোগ্য অবদান। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ২০২৩-২৪ মৌসুমে ২৬ গোল করার পাশাপাশি তিনি অ্যাসিস্ট করেন ১৮টি।
ব্যালন ডি’অর দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মে পরিবর্তন আনা হয় ২০২২ সালে। আগে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে পুরো বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হলেও, এখন বিবেচনায় ধরা হয় ইউরোপিয়ান ফুটবলের একটি মৌসুমকে (আগস্ট থেকে জুলাই)। সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত হন বিজয়ী।
সেরা ত্রিশ:
প্রথম: রদ্রি (ম্যানচেস্টার সিটি)
দ্বিতীয়: ভিনিসিউস জুনিয়র (রিয়াল মাদ্রিদ)
তৃতীয়: জুড বেলিংহ্যাম (রিয়াল মাদ্রিদ)
চতুর্থ: দানি কারভাহাল (রিয়াল মাদ্রিদ)
পঞ্চম: আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি)
ষষ্ঠ: কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/রেয়াল মাদ্রিদ)
সপ্তম: লাউতারো মার্তিনেস (ইন্টার মিলান)
অষ্টম: লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা)
নবম: টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ)
দশম: হ্যারি কেইন (বায়ার্ন মিউনিখ
১১তম: ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি)
১২তম: ফ্লোরিয়ান ভিরৎজ (বায়ার লেভারকুজেন)
১৩তম: দানি ওলমো (লাইপজিগ/বার্সেলোনা)
১৪তম: অ্যাডেমোলা লুকম্যান (আতালান্তা)
১৫তম: নিকো উইলিয়ামস (আথলেতিক বিলবাও)
১৬তম: গ্রানিত জাকা (বায়ার লেভারকুজেন)
১৭তম: ফেদেরিকো ভালভের্দে (রিয়াল মাদ্রিদ)
১৮তম: এমিলিয়ানো মার্তিনেস (অ্যাস্টন ভিলা)
১৯তম: মার্টিন ওডেগোর (আর্সেনাল)
২০তম: হাকান কালহানোগলু (ইন্টার মিলান)
২১তম: বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল)
২২তম: আন্টোনিও রুডিগার (রিয়াল মাদ্রিদ)
২৩তম: রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি)
২৪তম: উইলিয়াম সালিবা (আর্সেনাল)
২৫তম: কোল পালমার (ম্যানচেস্টার সিটি/চেলসি)
২৬তম: ডেকলান রাইস (আর্সেনাল)
২৭তম: ভিতিনিয়া (পিএসজি)
২৮তম: আলেক্স গ্রিমাল্দো (বায়ার লেভারকুজেন)
যৌথভাবে ২৯তম: মাটস হুমেলস (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), আর্তেম দোভিক (জিরোনা/রোমা)
এআর