ঢাকা : হিমালয়ের বুকে আরও একবার ফুটবলের ফুলে ফুটিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা ফুটবল স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার জিতেছে সাফের শিরোপা। দেশের ফুটবলে ছেলেদেরকে পেছনে ফেলেছেন সাবিনা খাতুনরা। গত কয়েক বছরে বাফুফে যে সাফল্যের বড়াই করে তা শুধুই মেয়েদের কারণেই। অথচ এই সোনার মেয়েদের ভাগ্যে জুটে না মূল্যায়ন। দুই মাস ধরে বকেয়া রয়েছে প্রাপ্য বেতনও।
অক্টোবর শেষ হতে বসেছে, অথচ গত মাসের বেতনই পাননি সাবিনা খাতুনরা। শুধু তা-ই নয়, মে ও জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত চারটি ম্যাচের ম্যাচ ফিও এখনো বুঝে পাননি নারী দলের ফুটবলাররা।
আগের চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ ১৫ ফুটবলার মাসে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা করে। ১০ জন পেতেন ৩০ হাজার টাকা, চারজন ২০ হাজার ও দুইজনের বেতন ছিল ১৮ হাজার টাকা করে। সব মিলিয়ে ৩১ ফুটবলারের জন্য বেতনের অঙ্ক ছিল মাসে ১১ লাখ টাকার কিছু বেশি।
তবে চলতি বছরের মে মাস থেকে সেটা বেড়েছে। বাফুফের তৎকালীন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আমলে সেটা বাড়ানো হয়েছিল। তারপর থেকেই শুরু হয় জটিলতা। শুরুতে বেতন দেওয়া হত একটু দেরিতে। কখনও সেটা মাসের শেষ দিকে গিয়ে হয়েছে। কিন্তু গত দুই মাস ধরে বেতনই পাচ্ছেন না ফুটবলাররা।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিকাংশ মেয়েরাই এসেছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। যাদের পরিবার খুব একটা স্বচ্ছল নয়। অনেক ফুটবলারের পরিবার টিকে আছে এই মেয়েদের বেতনের ওপর ভর করেই। দেশের নারী ফুটবলে নেই ক্লাবভিত্তিক কোনো ফুটবল প্রতিযোগিতা। যে কারণে শুধু বাফুফের থেকে প্রাপ্ত বেতনের ওপর নির্ভর করে চলতে হয় ঋতুপর্না চাকমাদের।
যদিও বেতন বন্ধ এবারই প্রথম নয়। গত বছরেও এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ২০২২ সালে নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর থেকে সাবিনা ও সানজিদাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি উঠেছিল। এজন্য অনুশীলনও বন্ধ রেখেছিলেন ফুটবলাররা, যার ফলে গত বছরের আগস্টে সাবিনাদের দাবি মেনে তাদের বেতন কাঠামোতে আনা হয়। তবে স্পন্সর খুঁজে না পাওয়ায় ফুটবলারদের নিয়মিত বেতন দিতে পারছিল না বাফুফে। খবরটি ফিফা অবদি পৌঁছে। তাই নিজেদের দেওয়া বার্ষিক তহবিল থেকে সাবিনাদের বেতন দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছিল ফিফা। সেবার অনিশ্চয়তা কাটলেও এবার ফের তৈরি হয়েছে জটিলতা।
বেতন দিতে না পারলেও বাফুফের বিলাসিতা কিন্তু কম ছিল না। সদ্য শেষ হওয়া বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন ঘিরে খরচ করেছে তারা প্রায় ৫০ লাখ টাকা। রাজধানীর পাঁচ তারকা একটি হোটেলে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাউন্সিলরদের মনোরঞ্জের চেষ্টাও করেছে বাফুফে। ১৩৩ ভোটিং কাউন্সিলর ছাড়াও আরও কয়েকটি নন-ভোটিং ডেলিগেট রয়েছে।
এজিএমে অংশ নেওয়া প্রত্যেকে দশ হাজার টাকা টিএ বাবদ সম্মানীও গ্রহণ করেছেন। দেশের ৬৪ জেলা থেকে আগত এসব কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আবাসনের ব্যবস্থাও করেছিল ফেডারেশন। কাউন্সিলর ও নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের জন্য রুম ভাড়ায় ব্যয় হচ্ছে ১১ লাখেরও বেশি। হিসেব করে দেখা গেছে আবাসন ও অ্যালাউন্স মিলিয়ে একজন কাউন্সিলরের পেছনে বাফুফের খরচ ২০ হাজার টাকারও বেশি। বাফুফের এমন বিলাসবহুল নির্বাচনের আয়োজন ফেডারেশনের পরবর্তী কার্যক্রমের গতি আনার ধারা। কিন্তু নারী ফুটবলারদের বকেয়া রেখে এমন আয়োজন মাঠের সাফল্যে ফেডারেশনের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
এসব দেখে মনের ভেতরে শুধুই ক্ষোভ জমিয়েছেন নারী ফুটবলাররা। কিন্তু সেটা প্রকাশ করেননি। উল্টো তারা নিজেদের কাজটা যথাযথভাবে করে গেছেন। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ হিসেবেখ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপও জিতে এসেছেন। যে সাফল্য দিয়ে আরও একবার তারা মূল্যায়িত হওয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই পারেন।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :