ঢাকা : সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পাকিস্তানের পর এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আরেকটি বড় সাফল্য অর্জন করলো বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের ঘরের মাঠে ১৫ বছর পর টেস্ট ম্যাচে হারানোর ইতিহাস রচনা করেছে টাইগাররা।
সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটারবিহীন (সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ) নতুন বাংলাদেশ অস্মিরণীয় এক জয় পেয়েছে।
অবশ্য এই পঞ্চপান্ডবের মধ্যে শুধু মুশফিকই বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইনজুরির কারণে উইন্ডিজ সিরিজে খেলেননি তিনি। বাকি চার সিনিয়র ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেট খেলছেন না।
এছাড়া ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও ইনজুরির কারণে দলের বাইরে থাকেন। সব মিলিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন তারণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি ১০১ রানের জয়ে রাঙিয়েছে।
এরআগে ২০০৯ সালে গ্রানাডায় ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ জিতেছিল তারা। দ্বিতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোয় দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করলো মিরাজরা। একই সঙ্গে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চক্রও জয় দিয়ে শেষ করতে পারার গৌরব অর্জন করল টাইগাররা।
দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ নিয়মিত সদস্য- মুশফিক ও শান্তকে ছাড়া সিরিজের প্রথম টেস্টে কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার পর সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর জয়টি বাংলাদেশের জন্য বিশেষ কিছুই। এই প্রথমবারের মতো এক বর্ষপঞ্জিতে বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ তিনটি টেস্ট ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও গড়ল বাংলাদেশ। আগামী ৮ ডিসেম্বর রবিবার সেন্ট কিটসে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট ম্যাচে হারানোর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন জাকের আলী অনিক, তাইজুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদরা। ম্যাচের আগের দিনই জয়ের ভিত গড়েছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন দলকে একাই টেনে নেন জাকের আলী।
তার ৯১ রানের ইনিংসের সুবাদে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ২৮৭ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিতে সক্ষম হয় টাইগাররা। জবাবে ১৮৫ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবিয়ানদের ইনিংস। ৫০ রানে ৫ উইকেট শিকারে কৃতিত্ব দেখান অভিজ্ঞ স্পিনার তাইজুল ইসলাম। দুই ইনিংস মিলে ৬ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে কার্যকরি অবদান রাখার জন্য ম্যাচসেরার পুরস্কারটি তার হাতেই উঠেছে।
গত মঙ্গলবার দিনের শুরুতে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান নিয়ে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নৈপুণ্য দেখান জাকের। অপর প্রান্তে উইকেট পতন হলেও দায়িত্বশীল ব্যাটিং উপহার দেন এই উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান।
চার-ছক্কার প্রদর্শণীতে সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০৫ বলে ৯১ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি। এতেই বড় লক্ষ্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
পরবর্তীতে বোলাররা তাদের কাজটা ঠিক-ঠাক মতো পালন করেন। তাইজুলের ঘূর্ণিতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপ। তার সঙ্গে তাসকিন ও হাসানও জ্বলে উঠেন। তারা দুজন ২টি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৬৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৪৬
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৯.৫ ওভারে ২৬৮ (আগের দিন ১৯৩/৫) (জাকের ৯১, তাইজুল ১৪, মুমিনুল ০, হাসান ৩, তাসকিন ০, নাহিদ ১*; সিলস ১৫.১-৩-৪৬-১, আলজারি জোসেফ ১৫.৫-১-৭৭-৩, শামার জোসেফ ১২-০-৮০-২, গ্রেভস ৮-১-২০-১, হজ ১-০-৪-০, রোচ ১০-০-৩৬-৩)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৫০ ওভারে ১৮৫ (ব্র্যাথওয়েট ৪৩, লুই ৬, কার্টি ১৪, হজ ৫৫, আথানেজ ৫, গ্রেভস ২০, জশুয়া ১২, আলজারি জোসেফ ৫, রোচ ৮, সিলস ১*, শামার জোসেফ ৮; হাসান ৬-০-২০-২, তাসকিন ১০-০-৪৫-২, তাইজুল ১৭-৫-৫০-৫, নাহিদ ৯-২-৩২-১, মিরাজ ৮-০-৩১-০)
ফল: বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাইজুল ইসলাম
ম্যান অব দা সিরিজ: তাসকিন আহমেদ ও জেডেন সিলস
এমটিআই