ঢাকা: পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার অপেক্ষায় বিশ্ব। বছরের শেষ ভাগে এসে প্রায় সব বিভাগ নিয়েই শুরু হয়েছে সালতামামির প্রস্তুতি। এরই মধ্যে ফুটবল মঞ্চের আলোচিত ঘটনাগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আয়োজনও। সবমিলিয়ে দেশের ফুটবলে বিদায়ী বছর কেমন কাটল, সেটি তুলে ধরা হলো সোনালীনিউজের পাঠকদের সামনে।
১. ব্যাক টু ব্যাক নারী সাফ শিরোপা
বিদায়ী বছরের অক্টোবরে নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাফে নেপালকে উড়িয়ে আবারও চ্যাম্পিয়ন হয় নারী ফুটবল দল। ২০২২ সালেও দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হয়েছিল সাবিনারা। টুর্নামেন্টজুড়ে ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার ও সিনিয়র ফুটবলারদের দ্বন্দ্ব ছিল আলোচনায়।
সব কিছু ছাপিয়ে মাঠে সেরাটা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। সাফ চ্যাম্পিয়ন সাবিনাদের ছাদ খোলা বাসে বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে আনা হয়। চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বেতন বকেয়া রেখেছিল বাফুফে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সাবিনারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সব আবদারের কথা জানান। উপদেষ্টাও নারী দলকে বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন। এছাড়া ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বিসিবি, বিওএ আর্থিক পুরস্কার প্রদান করে সাবিনাদের।
২. সালাউদ্দিন যুগের অবসান
ফুটবল তাকে ছাড়তে চাইলেও তিনি কোনোভাবে সরতে রাজি হচ্ছিলেন না। নানা বিতর্কের পরও টানা চার মেয়াদে বাফুফে সভাপতি ছিলেন। শুধু তাই নয় এবারের নির্বাচনেও অংশগ্রহণের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে অবশ্য সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন। এই নির্বাচনে আর অংশগ্রহণ করেননি। সাবেক ফুটবলার ও সহ-সভাপতি তাবিথ আউয়াল বাফুফের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সংগঠক তরফদার রুহুল আমিন সভাপতি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনই করেননি। তাবিথ আউয়াল শেষ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন দিনাজপুরের এফএম মিজানুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে। তাবিথের বিজয় ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করে হেরে গেছেন সাবেক দুই তারকা ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির ও শফিকুল ইসলাম মানিক। নির্বাচিত চার সহ-সভাপতি ফুটবলাঙ্গনে তেমন কোনো পুরনো ব্যক্তিত্ব নন। হঠাৎ করে ফুটবলাঙ্গনে আসা ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি ও অনেক দিন পর ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয় হওয়া সাব্বির আরেফ দুই সাবেক তারকা ফুটবলারকে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে।
৩. বয়সভিত্তিক পর্যায়েও শিরোপা
সিনিয়র নারী দলের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ বয়স ভিত্তিক দলও। বছরের শুরুটা ছিল ঢাকায় সাফ অ-২০ টুর্নামেন্টে নারীদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে। ভারতের বিপক্ষে নির্ধারতি সময় ও টাইব্রেকারেও খেলা ড্র ছিল। ম্যাচ কমিশনার টাইব্রেকার অব্যাহত না রেখে আকস্মিক টস করেন। ভারত শিরোপা উল্লাস করলেও বাংলাদেশ আপত্তি জানায়। এতে খেলা বিপত্তি ঘটে। শেষ পর্যন্ত যুগ্ম শিরোপা নির্ধারিত হয়। পরের মাসেই বাংলাদেশ নারী দল নেপালে সাফ অ-১৬ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফেরে। আগস্টে নেপালে সাফ অ-২০ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যুব ফুটবলাররাও।
৪. লেস্টার সিটির তারকা হামজা চৌধুরী এখন বাংলাদেশের
বছরের শেষ ভাগে দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় সুসংবাদ হামজা চৌধুরীর আগমন। লাল-সবুজের জার্সিতে খেলার ছাড়পত্র মিলেছে তার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটিতে খেলা এই মিডফিল্ডারের বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলতে আর কোনো বাধা নেই। নানা ইস্যুতে আবেদন নিষ্পত্তিতে অনেক সময় লেগে যায়। এক পর্যায়ে না হওয়ার আশঙ্কাও ছিল। তবে বাফুফে আর হামজার হাল না ছাড়া মনোভাবে ছাড়পত্র না দিয়ে থাকতে পারেনি ফিফা।
৫. দলহীন জামাল ভূঁইয়া
সরকার পতনের পর টালমাটাল হয়ে পড়ে দেশের ফুটবলাঙ্গন। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে অংশগ্রহণ করেনি শেখ রাসেল ও শেখ জামাল। ফুটবলারদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা ও চুক্তি হলেও পরবর্তীতে দুই ক্লাবই না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ফুটবলাররা চরম সংকটে পড়ে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী এবার লিগ খেলছে বিদেশি ফুটবলার ছাড়াই। আবাহনী ক্লাবে খেলার কথা ছিল জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার। ৫ আগস্টের পর ক্লাব চুক্তির অঙ্ক কমানোর প্রস্তাব দেয়। এতে তিনি রাজি হননি। শেষ মুহূর্তে এমনটা হওয়ায় তিনি অন্য কোনো দলেও যেতে পারেননি। ফলে প্রথম লেগে তার পক্ষে আর খেলা সম্ভব হয়নি।
৬. ফিফার শাস্তি
২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল ফিফা বাফুফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে নিষিদ্ধ করেছিল দুই বছরের জন্য। ২০২৩ সালের পরের বছরও ফিফার শাস্তি অব্যাহত ছিল। এই বছর মে মাসের দিকে ফিফা বাফুফের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে দায়িত্বে অবহেলার জন্য আর্থিক জরিমানা করে। পাশাপাশি বাফুফের কয়েকজন স্টাফকেও বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারাদেশ দেয়।
৭. সাফল্যহীন জাতীয় দল
বিদায়ী বছরে নারী দলের বড় সাফল্য থাকলেও তার ধারেকাছেও নেই বাংলাদেশ সিনিয়র পুরুষ ফুটবল দল। এই বছর আটটি ম্যাচ খেলেছে তারা। আট ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ ছয়টি হেরেছে আর দু’টি ম্যাচ জিতেছে। দু’টি জয়ই প্রীতি ম্যাচে। একটি ভূটানে আরেকটি ঢাকায় মালদ্বীপে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এই বছর চারটি ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। চার ম্যাচে জয় তো দূরের কথা একটি গোলও করতে পারেনি।
৮. প্রথম অধিনায়ক পিন্টুর চিরবিদায়
এই বছরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ও বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়কের মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে গভীর শোক নেমে আসে। মোহামেডান ক্লাব, বাফুফে, ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তাকে গভীর শ্রদ্ধা জানায়।
এআর