• ঢাকা
  • রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

নীতীশের নায়কোচিত সেঞ্চুরি, গ্যালারিতে কাঁদলেন বাবা


ক্রীড়া ডেস্ক ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪, ০২:৪৩ পিএম
নীতীশের নায়কোচিত সেঞ্চুরি, গ্যালারিতে কাঁদলেন বাবা

ঢাকা: মানুষ দুটি কারণে কাঁদে। একটি দুঃখের আরেকটি সুখের। ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে নীতিশ কুমার রেড্ডির বাবা মুতিয়ালা রেড্ডিও কেঁদেছেন। তবে এই কান্না সুখের, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ছেলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির উদ্‌যাপনের।

আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলেন আম্পায়াররা। অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের খেলোয়াড়েরা চলে গেলেন ড্রেসিংরুমে। মাঠে খেলা না থাকলেও তাতে ধারাভাষ্যকারদের ব্যস্ততা কমেনি। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ছুটে গেলেন মাঠে। ঠিক মাঠ নয়, মাঠের পাশে গ্যালারিতে। এক দল ভারতীয় দর্শক আনন্দে মেতেছে। তাদের মধ্যমণি সাদা শার্টের ওপর কালো কোট পরা এক ব্যক্তি।

তিনি কোনো ক্রিকেটার নন, ‘সুপারফ্যান’ও নন। কিন্তু একজন ক্রিকেটারের জন্য তিনি ‘সুপারম্যান’। কিছুক্ষণ আগেই এই সুপারম্যান আনন্দে হাত তালি দিতে দিতে কেঁদেছেন। কখনো আবার দু হাত ও মুখ ওপরে তুলে আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছেন। সব কষ্ট, সব গর্ব, সব কৃতজ্ঞতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে যা হয়, মানুষটির চোখেমুখে সেসব কিছুই জ্বলজ্বল করে ফুটে উঠছে।

মানুষটির নাম মুত্যলা রেড্ডি। নীতীশ কুমার রেড্ডির বাবা। আলোর অভাবে খেলা বন্ধের খানিক আগে পুরো মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) হাততালি দিয়েছে যাঁকে। সকালে ভারত যখন দিন শুরু করেছিল, আক্ষরিক অর্থেই কাঁপাকাঁপি চলছিল ব্যাটিংয়ে। চোখরাঙানি দিচ্ছিল ফলো-অন।

নীতীশ সেটি রুখে তো দিয়েছেনই, বরং প্রতিরোধে, প্রতি আক্রমণে আর লড়াইয়ের অসাধারণ প্রদর্শনী দেখিয়ে সবাইকে নিজের দিকে ‘ফলো ইন’ করিয়েছেন। মেলবোর্নে শেষ বিকেলে স্কট বোল্যান্ডকে লং অন দিয়ে চার মেরে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও।

হাল ক্রিকেটে কারও প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া বিশেষ ঘটনা নয়। যদি না কম বয়স, কম বল বা এ জাতীয় কোনো বিশেষত্ব না থাকে। নীতীশ তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন ১৭১ বলে। আর এই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই তার চেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির কীর্তি আছে শচীন টেন্ডুলকার, ঋষভ পন্তদের। আর এ ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরি তো অনেকেরই আছে।

তবু নীতীশের সেঞ্চুরিটি বিশেষ। আর বিশেষ বলেই ব্যাটের হাতলে হেলমেট রেখে আকাশে মুখ তুলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নীতীশ। গ্যালারিতে উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে মুত্যলা কখনো কাঁদছিলেন, কখনো আকাশে তাকিয়ে স্রষ্টাকে স্মরণ করছিলেন, আবার কখনো গলার সব জোর এক করে চিৎকার করছিলেন।

একজন মুত্যলার জীবনে এ সময়টা বিশেষ। ঠিক যতটা বিশেষভাবে ‘বিশেষ’ শব্দটাকে সংজ্ঞায়িত করা যায়, ততটাই। ভারতের টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার পর নীতীশই বিসিসিআই টিভিকে শুনিয়েছিলেন নিজের উঠে আসার গল্প। যে গল্প আসলে তার বাবার গল্প, মুত্যলার গল্প।

বিশাপত্তনমের এই মানুষটি ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে চাকরি ছেড়েছেন। কোচেরা যখন বাচ্চা নীতীশের খেলায় দুর্বলতা দেখে বলেছিলেন ‘ওকে দিয়ে হবে না। নিয়ে যান। পড়াশোনায় মনোযোগ দেন’-তখন মুত্যলাই নীতীশকে ৩০ কিলোমিটার দূরের মাঠে নিয়ে যেতে শুরু করেন অনুশীলনের জন্য। উদ্দেশ্য একটাই-ছেলে ভালো জায়গায় অনুশীলন করুক, ছেলে ভালো খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে উঠুক।

ক্রিকেটপাগল ভারতে বাচ্চাদের এবং বাচ্চার বাবাদের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা ও ক্রিকেটার বানানোর কাঠখড়ের গল্প নতুন কিছু নয়। অনেকেরই আছে। কিন্তু বাচ্চা নীতীশ ছিল সেই দলে, যার বড় ক্রিকেটার হয়ে ওঠা নিয়ে বড় আকাঙ্খা ছিল না।

নীতীশের মুখেই শুনুন, ‘বাবা আমার জন্য চাকরি ছেড়েছিলেন। এক দিন দেখলাম উনি কাঁদছেন। টাকা নেই। তারপর মনে হলো, না, এভাবে চলতে পারে না। খেলাটা আমি মনের আনন্দে খেলে যেতে পারি না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আমি ক্রিকেটে সিরিয়াস হলাম।’

বাবার কান্না দেখে ক্রিকেটে সিরিয়াস হওয়া নীতীশ আজ তারই সামনে মেলবোর্নে ব্যাট উঁচিয়ে বাবাকে কাঁদিয়েছেন আরেকবার। এই কান্না আনন্দের। এই কান্না গর্বের।

গ্যালারিতে মুত্যলার কাছে গিয়ে গিলক্রিস্ট জিজ্ঞেস করেছেন অনেক কিছুই। কেমন লাগছে, ওর উঠে আসা সম্পর্কে কী বলবেন, সেঞ্চুরির আগমুহুর্তে কেমন লাগছিল ...এসব। গর্বিত বাবা ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলতে পারলেন শুধু একটা কথাই-‘স্পেশাল ডে।’

নীতীশের সেঞ্চুরির দিনে মেলবোর্ন টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ভারতের রান ৯ উইকেটে ৩৫৮। নীতীশ ১০৫, মোহাম্মদ সিরাজ ২ রানে ব্যাট করছে। অস্ট্রেলিয়া এখনো ১১৬ রানে এগিয়ে।

এআর

Wordbridge School
Link copied!