Menu
ঢাকা: মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের তরুণ বোলার ভিগনেশ পুথুরের নাম রাতারাতি ক্রিকেট বিশ্ব জেনে গেছে। টি-টোয়েন্টিতে এমনিতেই রিস্ট স্পিনারদের কদর দিন দিন বাড়ছে। চায়নাম্যান হলে তো কথাই নেই!
একেবারেই অনভিজ্ঞ হলেও পুথুর একজন চায়নাম্যান বোলার বলেই হয়তো আইপিএল দুনিয়ার সঙ্গে তাকে এত তাড়াতাড়ি পরিচয় করিয়ে দিতে মুম্বাই টিম ম্যানেজমেন্ট দ্বিতীয়বার ভাবেনি।
তার ওপর ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যানদের তো চেন্নাইয়ের এক চায়নাম্যানই সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন। চেন্নাইয়ের আফগান স্পিনার নুর আহমেদ ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন।
চেন্নাইয়ের নুরের মতো তাদেরও যে এমন একজন আছে, পুথুরকে ইমপ্যাক্ট বদলি হিসেবে খেলিয়ে মুম্বাই সেটিই হয়তো দেখাতে চেয়েছে।
অথচ রোহিত শর্মার ইমপ্যাক্ট বদলি হিসেবে নামা ২৪ বছর বয়সী পুথুর এর আগে শীর্ষ পর্যায়ে কোনো ম্যাচই খেলেননি। আর আইপিএল দিয়ে শীর্ষ পর্যায়ে অভিষেকের ম্যাচটিই তিনি স্মরণীয় করে তুলেছেন ৩২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। তাও যেনতেন উইকেট নয়; প্রত্যেকেই চেন্নাইয়ের ‘পিওর ব্যাটসম্যান’-রুতুরাজ গায়কোয়াড়, শিবম দুবে ও দীপক হুদা।
এত বড় মঞ্চে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমে স্নায়ুচাপে ভেঙে পড়েছেন, এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। কিন্তু পুথুর কাল রাতে যে সাহস দেখিয়েছেন, সেটার তারিফ করতেই হয়। বলে দারুণ ফ্লাইট দিয়ে গায়কোয়াড়, দুবে ও হুদাকে বড় শট খেলতে প্ররোচিত করেছিলেন এই রিস্ট স্পিনার। প্রত্যেকেই টোপ গিলেছেন এবং বাউন্ডারির কাছে ধরা পড়েছেন।
কিন্তু ভিগনেশ পুথুরের বোলিং বিশ্লেষণ করা যতটা সহজ, এই পর্যায়ে তার উঠে আসা ততটা সহজ ছিল না। জন্ম ২০০১ সালের ২ মার্চ ভারতের কেরালা রাজ্যের মালাপ্পুরম জেলায়। বাবা সুনীল কুমার একজন অটোরিকশাচালক, মা কেপি বিন্দু তবে আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মা-বাবা পুথুরকে কখনো খেলতে বাধা দেননি। বরং ক্রিকেটের প্রতি ছেলের অগাধ ভালোবাসা দেখে তাকে মালাপ্পুরম ছেড়ে ত্রিশূর শহরে যেতে দেন। ত্রিশূরে গিয়েই নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেন পুথুর। কলেজ পর্যায়ের ক্রিকেটে ছিলেন পেসার, পরবর্তী সময় বনে যান স্পিনার।
খেলাধুলার পাশাপাশি লেখাপড়াও সমানতালে চালিয়ে গেছেন পুথুর। ত্রিশূরের সেন্ট টমাস কলেজ থেকে সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। গত বছর কেরালা ক্রিকেট লিগের প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয়। পুথুর খেলেছেন আলেপ্পি রিপলসের হয়ে। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই তিনি প্রথমবারের মতো পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন।
এর আগে তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগেও খেলেছেন। রাজ্য পর্যায়ে খেলেছেন কেরালা অনূর্ধ্ব-২৩ দলে। কেরালার মূল (সিনিয়র) দলের হয়ে অভিষেক হওয়ার আগেই কাল আইপিএল অভিষেক হয়ে গেছে তাঁর।
মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সঙ্গে ভিগনেশ পুথুরের যাত্রা শুরুর গল্পটাও রোমাঞ্চকর। ২০২৫ আইপিএলের জন্য বেশ আগে থেকেই তরুণ ও উদীয়মান খেলোয়াড় খুঁজতে শুরু করে মুম্বাইয়ের অনুসন্ধানী দল। কেরালা ক্রিকেট লিগে তাঁর বোলিং দেখেই দলটির চোখে লেগে যায়। এরপর তাকে ট্রায়ালে ডাকা হয়।
ট্রায়ালে ভালোভাবেই উতরে যাওয়ায় মুম্বাই কর্তৃপক্ষ ঠিক করে রেখেছিল পুথুরকে দলে ভেড়াবে। গত নভেম্বরে সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত মেগা নিলাম থেকে ভিত্তিমূল্য ৩০ লাখ রুপিতে তাঁকে কিনে নেয় মুম্বাই। তখন থেকে দলটির সংস্পর্শেই আছেন।
এশিয়ার শীর্ষ ধনী আম্বানি পরিবারের মালিকানাধীন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার লিগ এসএ২০-তে। দলটির নাম এমআই কেপটাউন, যারা এবার রশিদ খানের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এমআই কেপটাউনের নেট বোলার হিসেবে ‘সেবা দিতে’ গত জানুয়ারিতে পুথুরকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হয়। কেপটাউনের নেটেই রশিদ খানের সঙ্গে কাজ করার ও বিভিন্ন পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ হয় তাঁর।
জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে কাল পুথুরের বোলিং দেখে বলছিলেন, ‘সে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতির কিছুটা জোরে বল করছে, যা আমাকে কুলদীপ যাদবের প্রথম দিকের বোলিংয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।’
ভোগলে পরে পুথুরকে নিয়ে এক্সে লিখেছেন, ‘আইপিএলকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে। কারণ, তারা তরুণদের এমন এক মঞ্চ তৈরি করে দেয়, যারা অন্যথায় হারিয়ে যেতে পারত। তরুণ ভিগনেশ পুথুরকে দেখতে পেরে আনন্দিত।’
ভোগলের কথার সঙ্গে আরেকটু যোগ করে বলা যায়, আইপিএল শুধু তরুণদের বড় মঞ্চে খেলার সুযোগই করে দেয় না, ভবিষ্যতের তারকাও তৈরি করে। যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এমনকি ডেভিড ওয়ার্নারদের তো আইপিএলই ক্রিকেট মহাকাশের বড় তারকা হওয়ার সম্ভাবনার পথ খুলে দিয়েছে।
কে জানে, সেই পথ ধরে ভিগনেশ পুথুরও হয়তো বহুদূর এগিয়ে যাবেন। আইপিএল অভিষেকেই আলো ছড়ানো পুথুরের দিকে তাই আপাতত চোখ রাখতেই হচ্ছে।
এআর
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT