• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১
সাক্ষাৎকারে মারিয়াম ছন্দা

‘বটতলা’ না হলে মানুষকে খুশি করার অনুভূতি পেতাম না


শব্দনীল জুলাই ২৯, ২০২১, ০৫:১৩ পিএম
‘বটতলা’ না হলে মানুষকে খুশি করার অনুভূতি পেতাম না

ছবি : মাহমুদা রশীদ লতা এবং মারিয়াম ছন্দা

ঢাকা : লকডাউনের মধ্যে নিজেদের একটু ভালো রাখার জন্য মারিয়াম ছন্দা এবং মাহমুদা রশীদ লতা ভাবলেন কিছু একটা করবেন। সেই কিছু একটা থেকে দু’বোনের ‘বটতলা’। দায়িত্বও ভাগাভাগি করতে কার্পণ্য করলেন না। মারিয়াম ছন্দা হলেন ‘বটতলা’র ডিজাইনার এবং অন্যদিকে মাহমুদা রশীদ লতা হলেন সত্ত্বাধিকারী।

হাঁটি হাঁটি পা পা করে এক বছরের বটের তলে অনেক পণ্য এসে ভিড় করেছে। পোশাক প্রেমীদের জন্য ভিন্নধর্মী ও দেশজ সংস্কৃতির ডিজাইনে শাড়ি, থ্রিপিস, কুর্তি, পাঞ্জাবি, টপ, লং শার্ট এবং বাচ্চাদের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং আবৃত্তিকর্মী মারিয়াম ছন্দা ‘বটতলা’র কার্যক্রম নিয়ে মুখোমুখি হয়েছেন ‘সোনালী নিউজ’-এর সঙ্গে।

দেশজ সংস্কৃতির ডিজাইনে ‘বটতলা’-এর পণ্য

সোনালীনিউজ : আমাদের সংস্কৃতিতে নারী উদ্যোক্তা হওয়া অতটা সহজ নয়। আপনি পথটিকে কি করে সহজ করছেন?

মারিয়াম ছন্দা : সামাজিক অবস্থান থেকে পথটি আসলে খুব সহজ, এখনও নয়। আবার কাজ করতে না পারার মতো কঠিনও নয়। মূলত সহজ, কঠিনের পেন্ডুলামের উপর কিঞ্চিৎ নিয়ন্ত্রণ আপনার রয়েছে। ফলে, প্রথমত আপনার কিছু করার ইচ্ছা থাকতে হবে এবং আমাদের ভেতর সেই ইচ্ছাটি ছিলো। ইচ্ছার পরে, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের কথা আসে। আমাদের ইচ্ছাকে পরিকল্পনামাফিক বাস্তবায়ন করে ফেললাম। আর এর মাঝে যা এসেছিলো সব কিছুকেই অভিজ্ঞতা হিসেবে নিয়ে কাজ করেছি।
 

দেশজ সংস্কৃতির ডিজাইনে ‘বটতলা’-এর পণ্য

সোনালীনিউজ : শখের কাজ করতে করতেই কী ‘বটতলা’-র পরিকল্পনা ? 

মারিয়াম ছন্দা : অনেকটা তাই, আমাদের পরিবারটি মোটামুটি বড় বলা চলে। অন্যদিকে সকলেরই কিছু না কিছু প্রতিভা আছে। গতবছর প্রথম লকডাউনের সময় আমরা সকলেই যুদ্ধ করছিলাম কিভাবে ভালো সময় কাটানো যায়। এই বিচ্ছিন্ন সময়ের মধ্যে থেকে পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন। প্রথম দিকে ভালো থাকার জন্যই একটু একটু করে কাজ করলেও এখন নিয়মিতই করতে হচ্ছে।

দেশজ সংস্কৃতির ডিজাইনে ‘বটতলা’-এর পণ্য


সোনালীনিউজ : ‘বটতলা’ নামটির সঙ্গে নিজস্ব কোনও অনুভূতি আছে কি ?

মারিয়াম ছন্দা : হ্যাঁ, গত বছর লকডাউনে আমরা সব ভাইবোন বাসায় একত্রিত হয়েছিলাম। তখন প্রতিদিনই আড্ডা- খুনশুটি হতো। আড্ডা- খুনশুটি মাঝে হঠাৎ আমরা উদ্যোক্তা হতে চাইলাম। ভাইবোনদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম কি নাম দেয়া যায়। আমাদের গ্রামে প্রতি শুক্র ও বুধবার হাট বসে। হাট স্কুল প্রাঙ্গনের বটতলায় বসে। বট আর বটের সুবিশাল ছায়া যেনো গ্রামীণ সমাজের চিরায়ত দেশজ চিত্র ও বিশুদ্ধ সবকিছু প্রকাশের মাধ্যম। আলোচনায় নামটি উঠে আসলে এই ভাবনা থেকেই আমাদের নামকরণ। মূলত নামটি দিয়েছেন মুত্তালিব রিপন। যিনি আমাদের সেজ ভাইয়া।
 

দেশজ সংস্কৃতির ডিজাইনে ‘বটতলা’-এর পণ্য

সোনালীনিউজ : ই-কর্মাসে একটি নিজস্ব ডিজাইনের পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জার্নি খুব সহজ নয়। এই জার্নি সম্পর্কে জানতে চাই-

মারিয়াম ছন্দা : প্রথম যখন আমরা একটি প্রোডাকশন রেডি ব্লাউজ ও কুর্তি আনি তখন আমরা এতো সাড়া পেয়েছিলাম যে, ওই প্রোডাকশনের কথা এখনও বলি। যখন সবাই পছন্দ করতে শুরু করে আমাদের ডিজাইন ও কাপড়ের মান তখন আমরা অনেক বেশি উদ্ধুদ্ধ হই কাজের প্রতি। সবচেয়ে ভালো ব্যাপার যারা একবার আমাদের কাছ থেকে কিছু নিয়েছেন, সাধারণত তারা রেগুলার কাস্টমার হয়ে গিয়েছেন। এই একটা ব্যাপার আমাদের দারুণ শক্তি দেয়।
 

দেশজ সংস্কৃতির ডিজাইনে ‘বটতলা’-এর পণ্য

সোনালীনিউজ : একই সঙ্গে সংসার এবং ব্যবসা পরিচালনা করতে কোনও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না-

মারিয়াম ছন্দা : তা তো কিছুটা হতেই হয়। আমি আর আমার বড় বোন মূলত কাজটা করি, আপুর সংসার, সন্তান, চাকরি আছে আমার সংসার, পড়ালেখা সবকিছু সামলিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের পরিবার আমাদের সাহায্য করে এই ব্যাপারে। we are thankful to our family.  যদিও লকডাউন চলায় কিছুটা ধীরগতিতে কাজ করতে পারছি।

সোনালীনিউজ : একটি সুখ স্মৃতির ঘটনা শুনতে চাই, মানে ‘বটতলা’ না হলে হয়তো সেটা ঘটতো না -

মারিয়াম ছন্দা : পোশাক হাতে পাওয়ার পর ইনবক্সে কাস্টমারের উচ্ছসিত প্রশংসার প্রতিটিই একেকটা সুখস্মৃতি। যখন কেউ বলে এটা ইউনিক আর অনলাইনে অর্ডার করে এতো কোয়ালিটিফুল কাপড় পাওয়া যাবে এটা ভাবিনি তখন ভিষণ ভালো লাগে। অনলাইন পোশাকের কোয়ালিটির উপর মানুষের ভরসা আনতে পারছি এটা আনন্দের। বটতলা না হলে মানুষকে খুশি করার এই আনন্দ-অনুভূতি পেতাম না।
 

দেশজ সংস্কৃতির ডিজাইনে ‘বটতলা’-এর পণ্য

সোনালীনিউজ : ‘বটতলা’র ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানতে চাই -

মারিয়াম ছন্দা : ভবিষ্যতে নিজেদের একটা স্টুডিও করতে চাই। অনলাইন ভিত্তিক হলেও সেখানে আমাদের কাজগুলো প্রদর্শন করা হবে। আরও বেশি প্রোডাকশন আনবো প্রতিমাসে। মাত্র ১ বছরে আমরা যতোখানি উন্নতি করেছি সেই মাত্রাকে ছাড়িয়ে এই ধারাকে অব্যাহত রাখতে চাই। মানুষের আস্থার অন্যতম নাম হবে বটতলা এই স্বপ্ন দেখি যেহেতু আমাদের মোটো ‘আস্থাই যেখানে পুঁজি’।

সোনালীনিউজ/এসএন/আইএ

Wordbridge School
Link copied!