ঢাকা: ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে আনতে এক লাখ শিশুকে প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। প্রশিক্ষণ চলাকালে তাদের সবাই মাসে এক হাজার করে টাকা পাবে। ১০ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে নির্বাচিত ১০ হাজার শিশুর প্রত্যেককে দেওয়া হবে ১৩ হাজার টাকা।
‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)’ নামের এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১১২টি এনজিওর সঙ্গে চুক্তি করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত ২৬ অক্টোবর রাতে রাজধানীর বিজয়নগর শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় কেন্দ্র খুলে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এনজিওগুলো শিশুদের ছয় মাসের উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দেবে। পরের চার মাস দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তারা ঝুঁকিবিহীন কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করবে।
প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ২০২২ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে— আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. মনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এনজিওগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শিশু জরিপ শেষ করবে। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তারা এক লাখ শিশুকে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করবে।
মনোয়ার হোসেন বলেন, যেসব শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে, তারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কাজের ক্ষতি হলে তারা হয়ত প্রশিক্ষণ নিতে চাইবে না। সেজন্য আমাদের পরিকল্পনা হলো, কাজের পাশাপাশি তারা এ প্রশিক্ষণ নেবে। যাতে তাদের উপার্জনের কোনো ক্ষতি না হয়।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিশুদের প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে উপবৃত্তি দেওয়া হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণে যারা ভালো করবে তাদের মধ্য থেকে ১০ হাজার শিশুকে প্রাথমিক পুঁজির জন্য ১৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। যাতে প্রশিক্ষণ শেষে তারা নিজেদের নেওয়া কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এটি সরকারের ভালো একটি উদ্যোগ, আগেও ছিল। তবে এবার বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ যেসব কাজ
২০০৬ সালের বাংলাদেশ শ্রম আইনে ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজে নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুদের কাজে নেওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ নয়। জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ অনুসারে, ৫ থেকে ১৮ বছরের শিশু কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবে না।
২০১৩ সালে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৩৮ ধরনের কাজ শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ওয়েল্ডিং, মোটর ওয়ার্কশপ, যানবাহনের হেলপার, প্লাস্টিক ও রাসায়নিক কারখানা, জাহাজ ভাঙা, বিড়ি-তামাক কারখানা, নির্মাণকাজ, ইটভাটা, পাথর ভাঙা, অটোমোবাইল স্টেশন, অ্যালুমিনিয়াম, বর্জ্য অপসারণ, কাঁচ, সাবান, চামড়ার কারখানা, বিস্কুট কারখানা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতে শিশুশ্রম।
ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত যত শিশু
দেশে বর্তমানে কত শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত, সেই পরিসংখ্যান অজানা। কারণ, গত পাঁচ বছরে এ নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। তবে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু কর্মরত ছিল। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ছিল ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু।
ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে প্রকল্প
ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তিন পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। বর্তমানে চতুর্থ পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালন করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৮৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার টাকা।
২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমমুক্ত দেশ গড়ার চিন্তা
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমমুক্ত করতে চাই। আশা করি, সবার সহযোগিতায় আমরা ২০৩০ সালের আগেই শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে পারব।
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :