• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

‘পরোক্ষ ধূমপানে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যুর মতো ঘটনা বাড়ছে’


নারী ও শিশু ডেস্ক অক্টোবর ১৪, ২০২৪, ০১:০৫ পিএম
‘পরোক্ষ ধূমপানে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যুর মতো ঘটনা বাড়ছে’

ঢাকা: তামাক প্রাণঘাতী দ্রব্য। তামাকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ উভয় প্রভাবেই প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর পৃথিবীজুড়ে ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় শুধু তামাক গ্রহণের কারণে। এর মধ্যে ১২ লাখ মানুষই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত নিকোটিন অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ সাময়িকীর এক প্রবন্ধে উঠে এসেছে, পরোক্ষ ধূমপানে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। পরোক্ষ ধূমপানের হাত থেকে শিশু রক্ষায় সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছেন নারী মৈত্রীর নেত্রীরা। 

নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, গর্ভপাত এবং সন্তান জন্মদানে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বাড়ছে। তাই নারী ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জোরালো দাবি জানাচ্ছি।

তামাক নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদের কার্যকর ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে নারী মৈত্রীর আয়োজনে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে সাংবাদিকদের নিকট প্রত্যাশা ও করণীয়’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলির সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ অতিথি ছিলেন অনকোলজিস্ট প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লীড পলিসি এ্যাডভাইজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশ এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান, বিসিআইসি।

তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর সংশোধনী আনার যে উদ্যোগ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে একটি সময়োচিত এবং জনবান্ধব উদ্যোগ। তবে বেশ কিছু ধাপ পার হলেও আইনটিকে চূড়ান্ত রূপ পেতে হলে আরও কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এখনও এটি পাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

এটিকে আইনে রূপান্তরের পথে নানা রকম বাধা আসার আশঙ্কা রয়েছে, বিশেষ করে সংশোধনীর বিপক্ষে তামাক কোম্পানিগুলো নানামুখী অপ-কৌশল ও অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনবিভ্রান্তি তৈরি করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদেরকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। রাশেদ রাব্বি বলেন, তামাক থেকে সরকারের যে রাজস্ব আয় আসে তার চেয়ে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা বাবদ ব্যয় ৩৪ শতাংশের বেশি। ক্যান্সার

শামীম মেহেদী বলেন, তরুণরা ই-সিগারেটের প্রতি বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের এই আসক্তি থেকে বের করে আনতে ই-সিগারেট বাজারজাত বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ প্রাণ হারান তামাক সেবনের কারণে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ও জীবন রক্ষায় দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে এখনই। আইন শক্তিশালী করবার এই পদক্ষেপ বেগবান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন আমাদের গণমাধ্যমের বন্ধুগণ, যাদের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের লেখনি ও গণমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের কাছে পৌঁছানোর কৌশল।

প্রফেসর ড. গোলাম মহিউদ্দীন ফারুক বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের কারণে মুত্যুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী তামাক। তামাকের কারণে ফুসফুস ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াসের ক্যান্সার, মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হলেও ধুমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাশ এবং শক্তিশালী করা অতি জরুরি। যা তামাকমুক্ত সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে।

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত বিষয়গুলো যেমন- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক

দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সব প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করার প্রতি জোর দেন তারা।

ইউআর
 

Wordbridge School
Link copied!